নিজস্ব প্রতিবেদক, এএনবি নিউজএজেন্সি ডটকম : সোমবার র্যাব সদরদপ্তরে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে অভিভাবকদের প্রতি সন্তানের ওপর নজর রাখার পরামর্শ দিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ বলেন, রাজধানীর কলাবাগানে স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনাটি ছিলো ‘পূর্ণাঙ্গ ক্রাইম’।
আইজিপি বলেন, “১৮ বছরের নিচে বয়সের সবাই শিশু। মানবাধিকার কর্মীরা এনজিওকর্মীরা অনেক হৈ চৈ করে অনেক আইন কিন্তু পরিবর্তন সংশোধন করেছেন। কিন্তু কলাবাগানে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা কিন্তু পূর্ণাঙ্গ ক্রাইম। এখানে ধর্ষণ ঘটানো হয়েছে, মৃত্যু ঘটানো হয়েছে। অথচ আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী উভয়ই কিন্তু শিশু। “অথচ আমরা এই আইনগুলো করেছি। অবশ্যই আমাদের আধুনিকায়ন দরকার, আইজিপি হিসেবে আমি দ্বিমত পোষণ করি না। তবে অত্যাধুনিক আইন করতে গিয়ে আমরা দেশের মধ্যে কোনো সমস্যা তৈরি করছি কি না সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।”
গত ৭ জানুয়ারি রাজধানীর একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ও লেভেলের এই ছাত্রীকে অচেতন অবস্থায় ধানমণ্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যান তার ছেলে বন্ধু ইফতেখার ফারদিন দিহান। তবে তার আগেই মেয়েটির মৃত্যু হয়। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, “তার শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া না গেলেও যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথে ক্ষত চিহ্ন পাওয়া গেছে। বিকৃত যৌনাচারের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।” ১৭ বছরের মেয়েটিকে ‘ধর্ষণের পর হত্যার’ অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দিহান এরইমধ্যে আদালতে ‘দোষ স্বীকার’ করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে দিহানের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেছিলেন, “দুইজনের সম্মতিতে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়।” তবে মেয়েটির বাবা মামলায় অভিযোগ করেছেন, তার মেয়েকে কলাবাগান ডলফিন গলির বাসায় ডেকে নিয়ে ‘ধর্ষণ করেন’ দিহান। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে অচেতন হয়ে পড়লে বিষয়টি ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য আসামি নিজেই তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যান।
এদিকে পুলিশ মামলায় দিহানের বয়স ১৮ বছর উল্লেখ করলেও মেয়েটির সহপাঠীদের দাবি, রাজধানীর অপর একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে আগেই ‘ও লেভেল’ পাশ করা দিহানের বয়স অন্তত ২১ বছর। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে অভিভাবকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া দরকার বলে মনে করেন পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ।
আইজিপি বলেন, “পরিবারকে জানতে হবে ছেলে বা মেয়ে কোথায় কার সাথে মিশে, কী করে, কখন কোথায় যায়। এটা প্যারেন্টাল কন্ট্রোল। সন্তান জন্ম দিলে দায়-দায়িত্ব পিতামাতাকে নিতে হবে।” জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘র্যাব সেবা সপ্তাহ’- এ দরিদ্র, প্রতিবন্ধী ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পুলিশের মহাপরিদর্শক। র্যাব সদরদপ্তরের শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজাদ মেমোরিয়াল হলে দরিদ্র, প্রতিবন্ধী ও মেধাবী ৫০ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা সহায়তা, বই ও সনদপত্র দেওয়া হয়।

আইজিপি বেনজীর আহমেদ বলেন, “২০৪১ সালের মধ্যে আধুনিক বাংলাদেশ, ধনী বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। আজকের যারা শিশু-কিশোর তারাই মূলত ওই আধুনিক বাংলাদেশের, ধনী বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।” সেখানে এখন এই কিশোরদের মধ্যে ‘গ্যাং কালচার’ গড়ে উঠার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের সমস্যা হচ্ছে কিশোর গ্যাং। তারা মাদক নিয়ে ধ্বংস হয়ে যাক সেটা আমরা কোনোমতেই বরদাশত করতে পারি না।
“নতুন প্রজন্ম সামাজিকভাবে বিলুপ্ত বা বিনাশ হবে, তা হতে দেওয়া যাবে না। তাদেরকে সেই সময়ের জন্য যোগ্য নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। সেজন্য আমাদের সমাজের সাথে পরিবারকেও এগিয়ে আসতে হবে।” সন্তান কোথায় যায়, কার সাথে মিশে, কী করে সে সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখাটা বাবা-মায়ের দায়িত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দায় যদি না নিতে পারেন তাহলে সন্তান জন্ম দিয়েছেন কেন?” শিশু অপরাধীদের সামলানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো তুলে ধরে আইজিপি বলেন, “শিশুকে থানায় আনলেই প্রবেশন অফিসার নিয়ে আসতে হবে। বিন্তু দেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রবেশন অফিসার নেই। “তাদের রাখতে হবে শিশু সংশোধনাগারে। দেশে কয়টি আছে শিশু সংশোধনাগার? বিচার হবে শিশু আদালতে, কয়টি আছে এই শিশু আদালত?”
আইজিপি বলেন, “বিশ্বে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সফলতার দিক দিয়ে বাংলাদেশ ২০তম অবস্থানে রয়েছে, এটা বাংলাদেশের সাফল্য। “আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শুধু করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে সাফল্য অর্জন করিনি, আমরা অর্থনৈতিক দিক থেকেও সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এজন্য জিডিপিতে সাম্প্রতি আমরা ভারতের চেয়ে এগিয়ে আছি।” দেশে বর্তমান উন্নয়নের গতি আগামী ৫-৬ বছর অব্যাহত থাকলে ‘দরিদ্র আর দুঃস্থ শব্দগুলোর দ্রুত বিলুপ্তি ঘটবে’ বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ বলেন, “আমরা চাই না সেবা সপ্তাহ শুধু সপ্তাহের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকুক। প্রতিটি দিন, মাস, বছর হয়ে উঠুক সেবা সপ্তাহ। এভাবে দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য সেবার ব্রত নিয়ে আমরা কাজ করতে চাই।”
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “এই করোনাকালে তারা যেমন মাঠে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করেছে, অসহায় মানুষের পাশে থেকেছে তেমনি নকল মাস্ক-ওষুধ, ভুয়া করোনা টেস্টিং কিটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে।” অনুষ্ঠানে র্যাব মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বক্তব্য দেন।