নিজস্ব প্রতিবেদক,এএনবি নিউজএজেন্সি ডটকম : শনিবার মেলার সমাপনী দিন শুরু হয় সকাল ১১টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। শেষদিনের পুরো সময় বইমেলার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ছিল বইপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড়। শেষদিনে বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্টির কথাও জানিয়েছেন প্রকাশকরা।
সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠানে মেলার মাসব্যাপী প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন মেলা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল মান্নান ইলিয়াস।
আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ, স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর, বিকাশ লিমিটেডের সিএমও মীর নওবত আলী এবং ক্রসওয়াক কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মারুফ।
সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। স্বাগত ভাষণ দেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
বইকে ঘিরে পাঠক, লেখক ও প্রকাশকদের এই প্রাণের স্পন্দন মেলায় এবার বেশ কিছু বই ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।
পাঠক, লেখক ও প্রকাশকদের মতে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে অন্যতম বই ‘শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি’ বইটি। গ্রন্থটি লিখেছেন কবি, রাজনীতিক ও আইনজীবী এ্যাডভোকেট জাকিয়া তাবাস্সুম জুঁই এমপি (বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সম্মানিত সংসদ সদস্য-৩৩২)। এই বইটির বিশেষত্ব হচ্ছে বইটিতে ২২টি গান আছে যা কিনা তাঁর নিজেরই লেখা। পাঠকদের মতে বইটি অসাধারণ একটি বই। তাঁর কবিতা পাঠকদের ধরে রাখার দাবি করে।
এবারের মেলায় বিজ্ঞান ও আধ্যাতিক কবি রেজা সারোয়ার এর “REZA SARWAR’Z LEGENDS MODI-14” বইটির উন্মোচন হয়।.বইটিতে কবিতাগুলো সৃষ্টি রহস্য বিজ্ঞান ও আধ্যাতিক মেশানো। বইটি প্রকাশ হয় রাজ পাবলিশার্স থেকে। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে পাঠকরা বইটি পড়ে নতুন একধরণের স্বাদ খুঁজে পাবে।
অন্যতম কবি মাজহারুল ইসলাম সরকারের ‘নিঃ শব্দে শব্দ’ গ্রন্থটি পাঠকের মনের প্রত্যাশা পূরণ করবে এবং সর্বাধিক প্রচারিত ও প্রশংশিত হবে।
পাঠকদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে পেতে লেখক মনজুর এইচ. প্রকাশিত ‘ঘুরে দাঁড়ানো’ গ্রন্থটি অসাধারণ একটি মোটিভেশন গ্রন্থ। বইটিতে জীবনে শত আঘাত আসলেও বিশ্বাস না হারিয়ে এগিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বইটি পড়ে পাঠকরা বেশ আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে।
মেলার প্রতিবেদনে জালাল আহমেদ জানান, এবছর মেলায় ২৮ দিনে মোট নতুন বই এসেছে চার হাজার ৯১৯টি। গতবার ছিল চার হাজার ৮৩৪টি।
নতুন প্রকাশিত এসব বইয়ের মধ্যে গল্পগ্রন্থ ৬৪৪টি, উপন্যাস ৭৩১টি, প্রবন্ধগ্রন্থ ২৭১টি, কবিতাগ্রন্থ এক হাজার ৫৮৫টি, গবেষণাগ্রন্থ ১১২টি, ছড়ার বই ১১১টি, শিশুতোষ গ্রন্থ ২০৩টি, জীবনীগ্রন্থ ১৪৯টি, রচনাবলী ৮টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ ১৫২টি, নাটক ৩৪টি, বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ ৮৩টি, ভ্রমণ কাহিনী ৮২টি, ইতিহাসমূলক গ্রন্থ ৯৬টি, রাজনীতি বিষয়ক গ্রন্থ ১৩টি, চিকিৎসা-স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গ্রন্থ ৩৬টি, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গ্রন্থ ১৪৪টি, রম্য বা ধাঁধা বিষয়ক ৪০টি, ধর্মীয় গ্রন্থ ২০টি, অনুবাদ গ্রন্থ ৫৬টি, অভিধান বিষয়ক ১৪টি, সায়েন্স ফিকশন/গোয়েন্দা কাহিনী ৬৭টি এবং অন্যান্য ২৬৮টি। তবে গতবারের তুলনায় এবার ৮৫টি বেশি নতুন বই প্রকাশ পেয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “একুশে গ্রন্থমেলায় মানুষের মাঝে বই নিয়ে যে আগ্রহ দেখা গেছে তাতে প্রমাণ হয় প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশেও মুদ্রিত বইয়ের গুরুত্ব কিছুমাত্র হ্রাস পায়নি।”
রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্বাধীনতাস্তম্ভ সংলগ্ন মঞ্চে সাংস্কৃতিক আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রূপা চক্রবর্তী এবং হাসান আরিফ। রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং নজরুলগীতি পরিবেশন করেন খায়রুল আনাম শাকিল। সবশেষে ছিল লেজার শো।