জাবালে নূর পরিবহনের দুই চালক এবং একজন সহকারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড রায়
রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনার রায় প্রকাশ
আদালত প্রতিবেদক, এএনবি নিউজএজেন্সি ডটকম : বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দেওয়া রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর দুর্ঘটনার দেড় বছরের মাথায় রোববার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের র্পবেক্ষণে তিনি বলেন, “দেশের পরিবহন সেক্টরে ড্রাইভার হেলপারদের খামখেয়ালিপনায় মানুষ হত্যা নেশায় পরিণত হয়েছে। যা বন্ধ হওয়া আবশ্যক।”
দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় ‘অপরাধজনক প্রাণনাশের’ দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে দুই বাস চালক মাসুম বিল্লাহ ও জুবায়ের সুমন এবং হেলপার কাজী আসাদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ধারায় এটাই সর্বোচ্চ সাজা।
দণ্ডিত এই তিন আসামির মধ্যে পলাতক কাজী আসাদ বাদে বাকি দুজন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
জাবালে নূরের একটি বাসের মালিক জাহাঙ্গীর আলম ও হেলপার এনায়েত হোসেনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে রায়ে।
ওই পরিবহন কোম্পানির আরেক বাসের মালিক শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।
রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু বলেন, “ড্রাইভার ও হেলপার ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এই দুইজনকে হত্যা করেছে। এটা গর্হিত কাজ। এই ধারায় সর্বোচ্চ যে শাস্তি তাই হয়েছে। এই রায়ের মাধ্যমে বার্তাটি হল- বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে কোনোভাবে পার পাওয়া যাবে না।”
মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, “আইন অনুযায়ী তিনজন আসামির সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। যে দুজন খালাস পেয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না- সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
অন্যদিকে আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী মো. হাসিম উদ্দিন এএনবি নিউজএজেন্সি ডটকমকে বলেন, “আসামি মাসুম বিল্লাহ যে সময়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে মামলার কাগজপত্রে বলা হয়েছে, সে সময়ে তিনি মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে ছিলেন বলে সাক্ষ্যপ্রমাণে উঠে এসেছে। ওই ঘটনায় কোনো ময়নাতদন্তও হয়নি। সুতরাং নিরেপেক্ষভাবে রায় দেওয়া হলে আমার মক্কেল খালাস পেতেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।”
সেই দুর্ঘটনায় নিহত দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর আলম নিজেও একজন দূরপাল্লার বাসচালক। তবে রায় শুনতে তিনি আদালতে আসেননি।
দিয়ার মা রোকসানা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত রায় দিয়েছে, শুনে আমি খুশি হয়েছি। আমার মেয়েকেতো ফিরে পাব না। রায়ের মাধ্যমে কিছুটা হলেও শান্তি পাবে আমার মেয়ের আত্মা।”
রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তির ঘোষণার পর আসামি মাসুম বিল্লাহকে কাঠগড়ায় কাঁদতে দেখা যায়। সাজাপ্রাপ্ত বাকি দুই আসামিও ছিলেন বিমর্ষ।
চালক মাসুম বিল্লাহর বাসটি গত বছরের ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে শিক্ষার্থী ও পথচারীদের উপরে উঠে গেলে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও দ্বাদশ শ্রেণির আবদুল করিম রাজীব নিহত হয়; আহত হয় আরও কয়েকজন।
দিয়া ও রাজীবের মৃত্যুর পর শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনে এক সপ্তাহ অচল থাকে ঢাকার সড়ক, আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন জেলায়। শিক্ষার্থীদের সব দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে হয় সরকারকে।
শিক্ষার্থীদের দাবিতেই সংসদে পাস হয় দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা সড়ক পরিবহন আইন, যা গত ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়েছে।